বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্স ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়ার ১০ টি সহজ উপায়।
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্স ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়ার ১০ টি সহজ উপায়।
বর্তমান সময়ে প্রতিটি মানুষের জীবনে তথ্য-প্রযুক্তির প্রভাব অনেক ব্যাপক। আর এই ডিজিটাল যুগে ডাটা বা তথ্যই হচ্ছে একটি ব্যবসার অন্যতম চালিকা শক্তি। যার কাছে যতো বেশি ডাটা সে ততো বেশি ব্যবসায়ভাবে লাভবান। যদি এক কথায় বলতে হয় তবে বলতে হবে ডাটার মাধ্যমেই কাস্টমারের রুচি, পছন্দ, সমস্যা জানা যায় এবং একটি ব্যবসা সেই অনুসারে তার প্রোডাক্ট সাজাতে পারে, মার্কেটিং বা প্রচার করতে পারে। আর এ কারণেই ছোট থেকে বড় কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান, ডাটা সংগ্রহ, ম্যানেজমেন্ট এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে নতুন নতুন স্ট্রাটেজি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে এর সাথে সম্পর্কিত জবের সুযোগও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
ডাটা এন্ট্রি একটি এন্ট্রি লেভেলের জব হলেও যাদের মেধা আছে, সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা করতে পারে তাদের এখানে ভালো করার সুযোগ আছে। আর যেহেতু শিক্ষাগত যোগ্যতা এই পেশায় খুব বেশি প্রয়োজন হয় না, বাংলাদেশের মতো জায়গা থেকেও সমগ্র বিশ্বে ভালোভাবে ডাটা এন্ট্রি ক্যারিয়ার গড়া যায়। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া বা পাকিস্তান ডাটা এন্ট্রি জবে সমগ্র বিশ্বে বেশ ভালো পজিশনে আছে। যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় পেশা যেখানে অনলাইনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে কাজ করা যায়। সুতরাং আপনিও গ্রাম কিংবা শহর যেখানেই হোক খুব সহজেই ডাটা এন্ট্রি পেশা গড়তে পারেন।
ডাটা এন্ট্রি কি?
কম্পিউটারে বিশেষ সফটওয়্যারের সাহায্যে কীবোর্ড কিংবা ভয়েসের মাধ্যমে তথ্য ইনপুট দেওয়ার নামই ডাটা এন্ট্রি। ইন্টারনেট বা ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অনেক ধরণের ডাটা এন্ট্রি করা হয়। যেমন, টাইপিং, ফর্ম ফিলআপ, অনলাইন সার্ভে, কপি-পেস্ট, ক্যাপশন তৈরি, ডাটা এডিটিং, ফরমেটিং, কারেকশন, ডাটাবেজ আপডেটিং, ওয়েবপেজ কিংবা ইকমার্সে ডাটা এন্ট্রি, ক্যাপচা এন্ট্রি ইত্যাদি। এরকম প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ প্রকারের ডাটা এন্ট্রি জব আছে যা বাংলাদেশ থেকে খুব সহজে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে করা যায়।
ডাটা এন্ট্রির কি চাহিদা আছে?
অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে আসা অনেকেই প্রশ্ন করে ডাটা এন্ট্রির চাহিদা আছে কিনা বা ভবিষ্যতে থাকবে কিনা? আসলে এআই এর উন্নতির সাথে সাথে এরকম চিন্তা অনেকেই করছেন। তবে সত্য হচ্ছে ডাটা এন্ট্রির অনেক কাজ আছে এবং এর চাহিদা সারা জীবন থাকবে। যার কয়েকটি আমি উপরে উল্লেখ করেছি। কারণ এআই মানুষের মতো সব কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না। সুতরাং তথ্য-প্রযুক্তির যতো উন্নতি হতে থাকবে ডাটা এন্ট্রি কাজের চাহিদা বাড়তেই থাকবে।
ডাটা এন্ট্রি জব কীভাবে পাবো?
ডাটা এন্ট্রি কাজ মোটামুটি সহজ হলেও আপনাকে বেশ কিছু বিষয়ে দক্ষ না হলে ডাটা এন্ট্রি জব পাওয়া বর্তমানে সহজ নয়। এজন্য আপনাকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যদিও আপনি মাস দুয়েক সময় দিলে এসব দক্ষতা অর্জন করতে পারেন এবং ডাটা এন্ট্রি কাজ শুরু করতে পারেন।
আর আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল আলোচ্য বিষয় এটিই। অর্থাৎ বাংলাদেশে বসে ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়ার ১০ টি সহজ উপায়।
১. টাইপিং এ দক্ষ হওয়া
ডাটা এন্ট্রি কাজের প্রথম শর্ত হলো আপনার টাইপিং স্কিল বৃদ্ধি করা। অবশ্যই আপনাকে কীবোর্ড না দেখে দ্রুত টাইপ করতে পারতে হবে এবং আপনার টাইপিং সর্বদা নির্ভুল হতে হবে। আসলে কম্পিউটারে যেকোন কাজের জন্য টাইপিং স্কিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার টাইপিং স্পিড প্রতি মিনিটে ৩৫ ওয়ার্ড এর নিচে হলে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজ করে ভালো করতে পারবেন না। আরও বেশি হলে সেটা আপনার জন্য ভালো। আপনার ইনকাম বেশি হবে এবং আপনার ক্যারিয়ারও দ্রুত উন্নতির দিকে যাবে।
২. কম্পিউটারে বেসিক জ্ঞান রাখা
তারপর আসে কম্পিউটারের বেসিক জ্ঞান জানা। অর্থাৎ আপনি হয়তো টাইপিং শিখেছেন কিন্তু কম্পিউটারের অন্যান্য বিষয় তেমন জানেন না। যেমন ধরুণ আপনি কম্পিউটারে কীভাবে ফাইল সেভ করতে হয় জানেন না, ইন্টারনেট কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানেন না। এগুলা কম্পিউটারের বেসিক স্কিল। সুতরাং এগুলা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সেই সাথে কম্পিউটারের প্রিন্টার, রাউটার, ইউপিএস কীভাবে কাজ করে, সমস্যা হলে দ্রুত কীভাবে সমাধান করবেন ইত্যাদি ব্যাপারও আপনাকে আয়ত্তে রাখতে হবে।
৩. যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করুন
ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য আপনাকে ইংরেজি ভাষায় ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। কারণ বেশিরভাগ ডাটা এন্ট্রি কাজ ইংরেজিতেই হবে। সুতরাং আপনার ইংরেজি লেখা এবং পড়ায় ধীরে ধীরে আপগ্রেড করতে হবে। সেই সাথে আপনাকে ইংরেজিতে যোগাযোগ দক্ষতাও ভালো হতে হবে। যেহেতু আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কাজ করবেন সুতরাং যোগাযোগ দক্ষতা ভালো না হলে আপনি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিতে পারবেন না, আবার তাকে কাজ ডেলিভারি দিতেও সমস্যায় পড়বেন।
৪. বেসিক সফটওয়্যার জ্ঞান রাখা
সাধারণত আপনাকে কোন না কোন সফটওয়্যারের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি কাজ করতে হবে। এটা অবশ্য কোম্পানীভেদে ভিন্ন হয়। সুতরাং আমি স্পেসিফিক কোন সফটওয়্যারের নাম বলছি না। সাধারণত একটি সফটওয়্যার কীভাবে ইনস্টল করতে হয়, কীভাবে আনইনস্টল করতে হয় ইত্যাদি বিষয় জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া একটি সফটওয়্যার কীভাবে কাজ করে তা দ্রুত বুঝে নিতে পারাও প্রয়োজন। মাইক্রোসফট অফিস এবং গুগল ওয়ার্কস্পেস সম্পর্কে ভালো আইডিয়া নিন। সুতরাং আগে থেকে আপনার এসব বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে আপনি ভালো করতে পারবেন না। এজন্য আপনি যখন ডাটা এন্ট্রি শিখবেন তখনই ট্রেইনারেকে এসব বিষয় নিয়ে প্র্রশ্ন করুন।
৫. টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখুন
ইয়েস। টাইম ম্যানেজমেন্ট সকল ফ্রিল্যান্সিং কাজেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। দ্রুত সময়ে কাজ বুঝে নেওয়া, রেসপন্স করা এবং কাজ রিটার্ন দেওয়া খুব দরকার। অন্যথায় ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি অখুশি হবে এবং আপনার ফিডব্যাক খারাপ হয়ে যাবে। একইভাবে কাজের ডেডলাইন মাথায় রেখে সম্পূর্ণ কাজ ডেলিভারি দেওয়াও প্রয়োজন। আপনার সমস্যা থাকবে আবার পরিবারের চাপ থাকবে তবুও সঠিক সময়ে ক্লায়েন্টকে ম্যানেজ করে কাজ করতে পারা একটি দরকারী দক্ষতা।
৬. রিসার্চ স্কিল তৈরি করুন
ডাটা এন্ট্রির অনেক কাজ আছে যা আপনাকে ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য নিয়ে করতে হবে। দ্রুততর সময়ের মধ্যে সেগুলা না করতে পারলে আপনি ক্লায়েন্টকে খুশি করতে পারবেন না। আর এজন্য আপনার গবেষণার দক্ষতা উন্নত করতে হবে। সেই সাথে দ্রুত কীভাবে তথ্য খুঁজে পেতে হয় সেই ধারণাও আপনার থাকতে হবে। এসব ব্যাপারে আপনাকে কাজে বিড করার আগেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এজন্য গুগল এবং সার্চ ইঞ্জিনে কীভাবে তথ্য কালেক্ট করতে হয় তা জানতে হবে। না হলে আপনি ডাটা এন্ট্রি কাজে সুবিধা করতে পারবেন না।
৭. ওয়েবসাইট কীভাবে কাজ করে তার বেসিক শিখুন
অনেক ডাটা এন্ট্রির কাজ আপনাকে অনলাইনেই করতে হবে। হয়তো একটি ওয়েবসাইট দিয়ে দেওয়া হলো সেখান থেকে ডাটাগুলো এক্সেল শিটে নিতে হবে। আপনার এক্সেল থেকে ওয়েবেও ডাটা এন্ট্রি করা লাগতে পারে। সেহেতু এ ধরণের দক্ষতা না থাকলে আপনি পিছিয়ে যাবেন। এ ধরণের কাজে পেমেন্টও বেশি পাওয়া যায়। সুতরাং একটি ওয়েবসাইটের বেসিক যেমন এইচটিএমএল, সিএসএস বা ওয়ার্ডপ্রেস কীভাবে কাজ করে ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাহলে আপনার কনফিডেন্স বেশি থাকবে।
৮. ডাটাবেজ স্কিল গ্রো করুন
যেহেতু ডাটা এন্ট্রির কাজ করবেন সুতরাং আপনার অনেক কাজই ডাটাবেজ নির্ভর হবে। যেমন ইকমার্স সাইটে ডাটা এন্ট্রি বা কাস্টমার ডাটা কালেকশন ইত্যাদি। আবার এআই কাজেও ডাটা ইনপুটের প্রয়োজন পড়ে বেশ। আর এক্ষেত্রে আপনার ডাটাবেজ স্কিল না থাকলে বড় বড় ডাটা এন্ট্রি কাজ হারাবেন। এসব কাজের ভবিষ্যৎ চাহিদাও অনেক। আপনি যতো দ্রুত এসব স্কিল বৃদ্ধি করতে পারবেন ততই ডাটা এন্ট্রি মার্কেটে আপনি ভালো করবেন। শুধু মাত্র টাইপিং স্কিল দিয়ে ডাটা এন্ট্রিতে সামনের দিনগুলোতে ভালো করা কঠিন হবে।
৯. একুরেসি নিয়ে আসুন
টাইপিং দ্রুত করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ একুরেসি ঠিক রাখা। অর্থাৎ আপনার এন্ট্রি যদি ভুল হয় তাহলে তার ফলাফল সঠিক দিবে না। আর ক্লায়েন্ট এ ধরণের ভুল কখনই সহ্য করবেন না। তাদের দরকার একুরেট ডাটা এন্ট্রি। আর এজন্যই তারা আপনাকে হায়ার করেছে। আর আপনি যদি ভুল তথ্য প্রবেশ করান তাহলে তা কখনই ভালো নয়। আর এজন্য আপনাকে টাইপং স্পিড বৃদ্ধি করার সাথে সাথে একুরেসি নিয়ে ভাবতে হবে। বার বার প্রাকটিস করতে হবে। নিজেকে আপগ্রেড করতে হবে।
১০. টিমওয়ার্ক শিখুন
এই যুগে এসে একটি অতীব প্রয়োজনীয় দক্ষতা এটি। আপনি টিমওয়ার্ক করতে না পারলে কোন জবেই ভালো করবেন না। আপনার প্রমোশন আটকে যাবে। আর ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে টিম ওয়ার্ক করা আরও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি কোম্পানীতে হয়তো ১০ জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আছেন আর তাদের সাথে আপনার কাজ করতে হবে। সবার সাথে সঠিকভাবে কৌশলী হয়ে কাজ করা ছাড়া আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন না। সুতরাং টিমওয়ার্ক কীভাবে করতে হয় এবং কীভাবে আরও ভালো করা যায় সে বিষয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
উপসংহার
সবশেষে বলবো ডাটা এন্ট্রি বেশ সহজলভ্য কাজ হলেও দিন দিন নিত্য নতুন প্রযুক্তির সাথে যারা মানিয়ে চলতে পারে তাদের চাহিদা বাড়তেই থাকবে। আর বাংলাদেশে থেকেও আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজ করে সহজে ২০ হাজারের বেশি ইনকাম করতে পারেন।
সুতরাং আপনি যদি নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে পারেন তাহলে স্টুডেন্ট লাইফে কিংবা গৃহিনীদের সংসারের ব্যস্ততার মাঝে ভালো একটি ইনকাম সোর্স হতে পারে। তাছাড়া যারা জব করেন তারাও নিজের ইনকাম বৃদ্ধির জন্য পার্টটাইম ঘরে বসে বাড়তি ইনকাম করতে পারেন।
আশা করি ডাটা এন্ট্রি কাজ শুরু করতে এই আর্টিকেল আপনাকে সহায়তা করতে। কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে করুন। আর ঘুড়ি লার্নিং থেকেও আপনি ডাটা এন্ট্রি শিখতে পারেন। কোন সাপোর্ট লাগলে যোগাযোগ করুন। ধন্যবাদ।
Comments
Post a Comment